বাংলায় চাণক্য নীতি (শ্লোক)
শ্রীল প্রভুপাদের বিভিন্ন গ্রন্থ, প্রবচন আলোচনা থেকে চাণক্যের শুধু মাত্র নীতি কথা গুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করছি এর মাধ্যমে আমরা আপনাদের কে একটি মূল্যবান সঙ্গ দিতে পারব।
শ্লোক-০১
সদ গুণ সম্পন্ন একজন পুত্র শত শত পুত্রের চেয়েও শ্রেয় । যেমন একটি চাঁদ রাতের অন্ধকার দূর করে অথচ হাজার হাজার তারকা তা করতে পারে না ।
শ্লোক-০২
ঋণগ্রহীতার পিতা, অসতি মাতা, অধিক সুন্দরী স্ত্রী এবং অজ্ঞ পুত্র পারিবারিক জীবনের শত্রু ।
শ্লোক-০৩
প্রথম পাঁচ বছর পুত্রকে স্নেহ দিয়ে লালন করবে । পরবর্তী 10 বছর তাকে কঠোরভাবে শাসন করবে। 16 বছর বয়সে কোন ছেলে তার সাথে বন্ধুর মত আচরণ করবে ।
শ্লোক-০৪
স্বভাবত কেউ আমাদের বন্ধু বা শত্রু নয়। একমাত্র কাজের দ্বারাই মানুষ আমাদের বন্ধু বা শত্রু বলে পরিগণিত হয় ।
শ্লোক-০৫
কারো অধিকারে যা আছে তার সবই বরং সৎ উদ্দেশ্যে অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবানের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা উচিত, কারণ মৃত্যুকালে কেউ তার সম্পদ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না ।
শ্লোক-০৬
অতিরিক্ত স্নেহ করার ফলে সন্তান অনেক দোষ জন্মায়। কিন্তু কঠোরতায় সুন্দর চরিত্র গড়ে ওঠে.। তাই সন্তান ও শিশুর প্রতি কোমল নয় কঠোর হন ।
শ্লোক-০৭
যে গাভী গর্ভধারণ ও দুগ্ধ দান করতে পারে না তার কি প্রয়োজন? যে পুত্র বিদ্বান বা ভগবদ্ভক্ত কোনোটিই নয় তারই বা কি প্রয়োজন ?
শ্লোক-০৮
দুর্জনের সঙ্গ ত্যাগ করো। সাধুসঙ্গ ভজন করো । দিনরাত শুধু পূর্ণ করো । এবং সর্বদা এই জগতে অনিত্যতা স্মরণ করো ।
শ্লোক-০৯
সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী লক্ষীদেবী সেখানেই বাস করেন, যেখানে দুষ্টু ব্যক্তিরা পূজিত হয় না, ধানদি প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত থাকে এবং দাম্পত্য কলহ নেই।
শ্লোক-১০
দুর্জন বিদ্বান হলেও যে কোন মূল্যে তাকে এড়িয়ে চলা কর্তব্য । মনি ভূষিত বিষাক্ত সর্প অধিক ভয়ঙ্কর নয় ?
শ্লোক-১১
যিনি পরস্ত্রীকে মায়ের মতো, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢালার মতো এবং সমস্ত জীব কে নিজের মত দর্শন করে তিনি প্রকৃত পন্ডিত ।
শ্লোক-১২
মহৎ গুণের দ্বারাই কেউ মহৎ হয় কেবল উচ্চপদ করে নয়। কাক রাজপ্রাসাদের ছাদের উপর বসতে পারে তাই বলে সে গরুড় হয়ে যায় না ।
শ্লোক-১৩
অগ্নি শত্রু এবং রোগব্যাধি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা উচিত, অন্যথায় তা বাড়তেই থাকে ।
শ্লোক-১৪
সাধুগণ সকল জীবকে তাদের কৃপা প্রদান করে । এমনকি যাদের সদগুন নেই তাদেরও, ঠিক যেমন সমাজচ্যুত ব্যক্তির গৃহে আলো বিতরণ করতে চাঁদ বিরত হয় না ।
শ্লোক-১৫
বিষের পাত্র থেকে অমৃত, অপবিত্র স্থান থেকে স্বর্ণ, সবচেয়ে নিচ ব্যক্তির কাছ থেকেও জ্ঞান এবং নিজের পরিবার থেকেও গুণবতী পত্নী গ্রহণ করা উচিত ।
শ্লোক-১৬
নখ যুক্ত প্রাণী, নদী, শিংওয়ালা জন্তু, অস্ত্রধারী ব্যক্তি, নারী অথবা রাজনীতিক রাজনীতিবিদকে কখোনোই বিশ্বাস করতেন নেই।
শ্লোক-১৭
যে ব্যক্তির গৃহে স্নেহমহি মা অথবা সুশীলা স্ত্রী কোনটাই নেই। তার উচিত তৎক্ষণাৎ গৃহ পরিত্যাগ করে বনে গমন করা। এমন ব্যক্তির কাছে বনবাস, গৃহে বাসকরা চেয়ে কিছুমাত্র খারাপ নয় ।
শ্লোক-১৮
চাঁদ নক্ষত্ররাজির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, সুসশক পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং প্রতি পত্নির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। কিন্তু বিদ্যা সবার এবং সমস্ত জিনিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
শ্লোক-১৯
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া হয় কিন্তু তারা তা ভুলে যায়। খুব হালকা ভাবে এদের গ্রহণ করা উচিত ঠিক ছাগলের সাথে ছাগলের যুদ্ধের মতো, বনবাসী সাধুর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কিংবা সূর্যদয় মেঘের গর্জন এর মত ।
শ্লোক-২০
দু ধরনের হিংসুক প্রাণী আছে, যথা সাপ এবং সাপের ন্যায় ক্রূর স্বভাববিশিষ্ট মানুষ। এদের মধ্যে সাপের মতো ক্রূর স্বভাববিশিষ্ট মানুষ অধিক বেশি ভয়ানক।কারণ মন্ত্রের দ্বারা সাপকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ক্রূর স্বভাবের মানুষকে বশীভূত করা যায় না।
শ্লোক-২১
জীবনের একটি মাত্র মুহূর্ত যদি বৃথা ব্যয় হয় তবে কোটি কোটি স্বর্ণমুদ্রা বিনিময়ে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। সুতরাং বৃথা সময় নষ্ট করার চেয়ে বেশি ক্ষতি আর কি হতে পারে ?
শ্লোক-২২
যার স্ত্রী অসতী, বন্ধু প্রতারক, এবং চাকর অবাধ্য , গৃহে তার সাপের বাস , অতএব মৃত্যু তার অনিবার্য।
শ্লোক-২৩
সন্তানহীন গৃহ শূন্য, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বর্গ ছাড়া ব্যক্তির দশ দিকশূন্য , মূর্খ ব্যক্তির হৃদয় শূন্য আর এসব শূন্যতার সম্মিলিত রূপ হল দরিদ্রতা ।
শ্লোক-২৪
বিদ্যা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার মধ্যে কোন তুলনা চলে না। রাজা শুধু তার নিজ রাজ্যে সম্মানিত হন, কিন্তু বিদ্বান ব্যক্তি সর্বোচ্চ সম্মানিত হন।
শ্লোক-২৫
দূর থেকে কোন সুন্দর লম্বমান পোশাক পরিহিত ব্যক্তিকে ততক্ষণ ভালো দেখায় যতক্ষণ সে কথা না বলে ।
শ্লোক-২৬
একটি উৎকৃষ্ট বৃক্ষের পুষ্প যেমন এর সুবাস দ্বারা সমগ্র বোনকে সুবাসিত করে, তেমনি একজন সুপুত্র ও সমস্ত পরিবারের মহিমা বৃদ্ধি করে।
শ্লোক-২৭
শুধু ইচ্ছা করার মাধ্যমে কার্যসিদ্ধি হয়না, হয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে। আহার হিসেবে কোন ঘুমন্ত সিংহের মুখে বনের প্রাণীরা আপনা-আপনি প্রবেশ করে না।
শ্লোক-২৮
যদি পারমার্থিক উন্নতি চান, তবে আপনার ভাবা উচিত মৃত্যু আপনার সন্নিকটে, কিন্তু যদি জড়-জাগতিকভাবে সুখী হতে চান, তবে আপনার ভাবা উচিত, আপনি কখনোই মৃত্যুবরণ করবেন না। 28
শ্লোক-২৯
মহৎ ব্যক্তিদের আচরণ কী বিস্ময়কর । ধন-সম্পদ তারা তেমনি গ্রাহ্যই করে না কিন্তু একে তারা দায়ভার হিসেবে গ্রহণ করেন।
শ্লোক-৩০
ব্যক্তির জড় দেহ ও সদগুণের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর, জড় দেহটি চোখের পলকে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, কিন্তু খ্যাতি বা সুনাম চিরকাল থাকে ।যে স্থানে মহাজন, বিদ্বান ব্রাহ্মণ, রাজা, নদী ও চিকিৎসক নেই সে স্থানে এক দিনও অবস্থান করতে নেই।
শ্লোক-৩১
অনেক ভাল গুণ থাকলেও দারিদ্র সমস্ত গুণ নষ্ট করে দেয়।
শ্লোক-৩২
পিতার ( গুরুর ) সম্পত্তির ওপর পুত্র ও শিষ্যের সমান অধিকার রয়েছে ।
শ্লোক-৩৩
শত্রুর প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করবেন না। তাকে সর্বদা বিপদজনক মনে করুন।
শ্লোক-৩৪
তপস্বীর তপস্যার শক্তি নিহিত তার ক্ষমা করার সামর্থের মধ্যে ।
শ্লোক-3৫
দয়ার জবাব দয়ায়, আক্রমণের জবাব প্রতিআক্রমণ এর দ্বারা দিলে তাতে কোন দোষ থাকে না । প্রতারকের সাথে ব্যবহারে প্রতারণার আশ্রয় অবশ্যই নিতে হবে।
শ্লোক-৩৬
যিনি গৃহত্যাগ করেন না এবং অঋণী তিনিই সুখী।
শ্লোক-৩৭
গর্ভধারিনী মা, গুরুপত্নী, ব্রাহ্মণ পত্নী, রাজ পত্নী ( রানী ) গাভী, সেবিকা এবং পৃথিবী এই সাতজন আমাদের মাতা বলে অভিহিত।
শ্লোক-3৮
একটি মাত্র বৃক্ষে লাগা আগুনের দ্বারা যেমন সম্পূর্ণ বন ভস্মে পরিণত হতে পারে তেমনি একজন কুপুত্রের দ্বারা সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হতে পারে।
শ্লোক-৩৯
রূপ-যৌবন সম্পূর্ণ উচ্চ কুলঅদ্ভুত ব্যক্তিও যদি জ্ঞানী হয়, তাকে উৎকৃষ্ট বলে মনে করা হয় না, ঠিক যেমন গন্ধহীন হওয়া কিংশুকে বৃক্ষের সুন্দর ফুলকে উৎকৃষ্ট বলে মনে করা হয় না।
শ্লোক-৪০
দুধ পান করার ফলে সাপের শুধু বিষই বৃদ্ধি পায়, তেমনি মূর্খ কে সদুপদেশ দান করলে তারা ক্ষুব্ধ হয়। মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারে না ।
No comments