জয়া

জয়া

বিজয় কুমার মিত্র 

graphtoons
জয়া 




Characters 
1. তন্ময় (২৩)
2. অনুপম(২৩)
3. জয়া (১৩)
4. জমিদার (৬০)
5. সাধক (৬০)
6. কাহার


Scene -1
জঙ্গল 

Narrator 
অনুপম ও তন্ময় নামে দুজন বোটানিক্যাল ছাত্র, তারা বেশ কিছুদিন ধরে এই রাজস্থানের বিশাল জঙ্গলে তাদের প্রজেক্ট জন্য নানাধরনের গাছ পালার অধ্যায়ন করে। শহরে থেকে বেশ দূরে এই জঙ্গল, আর এই বিশাল জঙ্গল পেরিয়ে, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে আছে আমতলা গ্রাম। অনুপম ও তন্ময় প্রত্যেকদিন সকালে তাদের গাড়ি করে এখানে আসে এবং সন্ধ্যা নামার আগেই তাদের গাড়ি করে আবার ফিরে যায় শহরে.. আজ কেও প্রায় তাদের কাজ শেষ পর্যায় 

তন্ময়
এই অনুপম হয়েছে,.. নে তাড়াতাড়ি কর এবার বেরোতে হবে তো 

অনুপম
হ্যাঁ, আর পাঁচ মিনিট 

তন্ময়
উফফ, আরে বাবা সেই তখন থেকে পাঁচ মিনিট,পাঁচ মিনিট করে আধা ঘণ্টা পেরিয়ে গেল যে, এবার তো সন্ধ্যা নেমে আসবে।। এই পরশু দিন আমাদের বাইক ঠিক ভাবে চল ছিল না। তোকে কত বার করে বললাম বাইকটা একবার মেকনিক কে দেখিয়ে নে কিন্তু বাবু যে সময়ই হচ্ছে না। যদি আবার হুট খারাপ হয়ে যায়, তাহলে কি সারা রাত এই জঙ্গলে বসে পোকা মাকড়ের গান শুনবি 

অনুপম
আরে বাবা যাচ্ছি তো,.. হয়ে গেছে। নে চল এবার। মাঝে মাঝে তোর কি যে হয় ভগবানই জানে। চল চল তাড়াতাড়ি চল

Narrator 
এর পর অনুপম ও তন্ময় তাদের জিনিসপত্র ঘুচ্ছিয়ে বাইক চেপে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে আর কিছুক্ষণ এগিয়ে যেতেই বাইক বন্ধ হয়ে যায়। অনুপম বেশ কয়েকবার বাইক স্টার্ট করার চেষ্টা করলেও বাইক আর স্টার্ট হয় না।

(তন্ময়ের কাঁধে একটা বেগ আছে)

তন্ময়
হয়েছে, আমার কথা মিলেছে,.. যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়

অনুপম
যাক বাবা, এখানে আবার বাঘ কথেকে এলো

তন্ময়
আরে বাঘ না হলে কি হবে, পোকা মাকড়, অন্ধকার তো আছে।

অনুপম
হ্যাঁ, সে আছে। Hmm, ঠিক আছে কি আর করা যাবে, যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত

তন্ময়
ঠিক আছে চল

Narrator 
এর পর তারা দুজনে হেঁটে হেঁটে জঙ্গলের পথ ধরে এগিয়ে যায় আর কিছুক্ষণ পরে সন্ধ্যে নেমে এসে রাত হয়ে যায়। চারিপাশে শুধু অন্ধকার। তারা মোবলের ফ্ল্যাশ অন্ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এক পর্যায়ে তাদের মনে হয় যেন তারা জঙ্গলে হারিয়ে গেছে। তারা অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পথ খুঁজে পায় না

তন্ময়
অনুপম, এই অনুপম

অনুপম
হ্যাঁ

তন্ময়
আরে এই রাস্তা যে বোঝায় মুশকিল

অনুপম
হ্যাঁ, সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। এখন কি যে করি, কোন দিকে যে যায়,..(ভেবে) hmm, আমার মনে হয় ওই দিকটা গেলে বোধ হয় কোন রাস্তা পাওয়া যেতে পারে 

তন্ময়
কিন্তু আমার মনে হয় না, কারণ আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। তার চেয়ে বরং আমাদের কোন নিরাপদ জায়গা খুঁজে আজকের রাতটা কাটানো দরকার

অনুপম
হ্যাঁ সেটাও করা যেতে পারে, তাহলে

(তন্ময় হুট করে বলে) 

তন্ময়
এই এই এক মিনিট ইসসসস

অনুপম
কি কি হয়েছে কি

তন্ময়
আরে বাবা বাড়িতে ফোন করা হয়নি। বাড়িতে জানাতে হবে না

অনুপম
হ্যাঁ ঠিক বলছিস, এই রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির কথা যে ভুলেগেছিলাম

Narrator 
এর পর তারা দুজনই তাদের বাড়িতে ফোন করে। অন্ধকার রাতে গাছের দীর্ঘ ছায়া, অজানা প্রাণীর শব্দ, বিভিন্ন ধরনের পাখির কিচিরমিচির, কীটপতঙ্গের গুঞ্জন, এসবই জঙ্গলে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি করছিল। এই সবের মধ্যে তারা দুজনেই নিরাপদ জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছিল
 কিন্তু এই এত বড় জঙ্গলে নিরাপদ জায়গা খোঁজা খুব একটা সহজ ছিল না। 
(তারা জঙ্গলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে)
হঠাৎ তাদের চোখ পড়ে এক পুরোনো ভাঙ্গা বাড়ির ওপর।

Scene -2
বাড়ি 

অনুপম
এই তন্ময় ওটা মনে হয় কোন একটা বাড়ি

তন্ময়
হ্যাঁ তাই তো,. দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো বাড়ি।দেখে মনে হচ্ছে এটা অনেক পুরোনো বাড়ি আর দেখ কেমন কালো হয়ে গেছে না, মনে হচ্ছে j, এই বাড়িতে আগে আগুন লেগেছিল।

অনুপম
হ্যাঁ, তাই মনে হচ্ছে। যাক গে,.. ওসব নিয়ে আমাদের ভেবে লাভ নেই। তারা চেয়ে বরং আমরা আজকের রাতটা ওখানেই কাটায়

তন্ময়
না বলার যে কোন জায়গা নেই,. চল চল তাড়াতাড়ি চল.. উফফ বাবা, হেঁটে হেঁটে জীবন বেরিয়ে যাচ্ছিল


Narrator 
এর পর ভাঙা দরজা দিয়ে দুজনেই ঘরের ভেতরে যায়। তারা মোবাইলের ফ্ল্যাশ দিয়ে বাড়ির চারপাশে তাকায়, বড় - বড় মাকড়সার জাল ছাড়া সেখানে কিছু দেখতে পায় না।
তাই দুজনেই সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত হয়ে যায়। তন্ময় পা দিয়ে ঘরের কোণে ময়লা আর শুকনো পাতা পরিষ্কার করে, আর অনুপম ঘরের পেরেকের ওপর ব্যাগটা ঝুলিয়ে রাখে। তখনি হঠাৎ তন্ময় চিৎকার করে ওঠে

তন্ময়
আ…

অনুপম
কি হয়েছে?

তন্ময়
সাঁপ.. সাঁপ

অনুপম
কোথায় সাঁপ?

তন্ময়
ও ওই পাতাগুলোর নিচে ছিল

(অনুপম যেই এগিয়ে যায় তখনি সাঁপ ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়)

অনুপম
 চলে গেল.. 

Narrator 
তারা দুজনে নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষন কথা বলে আর তারপর ঘুমিয়ে পড়ে।প্রায় দুই ঘণ্টা পার হয়ে যায়।তখন অতিরিক্ত ওজনের কারণে পেরেকের ওপর ঝুলে থাকা ব্যাগটি নিচে পড়ে যায় এবং তার সঙ্গে পেরেকটিও পড়ে যায়।
তন্ময় ঘুমের ঘোরে চোখ খুলে বেগের দিকে একবার তাকায় এবং তারপর চোখ বন্ধ করতে যেতেই সে শুনতে পায় একটি মেয়ের কান্না

(কান্না)

সঙ্গে সঙ্গে তন্ময়ের ঘুম ভেঙে যায়.. তখনও কান্নার আওয়াজ সমানে আসে। তন্ময় ভয় পেয়ে যায়,সে অনুপমকে জাগানোর কথা ভাবে কিন্তু না জাগিয়ে কাতর স্বরে বলে

তন্ময়
ক ক কে, কে 

(কান্না)

Narrator 
কোন জবাব পায় না।এবার তন্ময় মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে ঘরের চারিদিকে তাকায়। তখন তার চোখ পড়ল ঘরের এক কোণে যেখানে একটি মেয়ে মাথা নিচু করে বসে অনবরত কাঁদছে।

তন্ময়
এই ক ক কে তুমি? তুমি কাঁদছো কেন?

Narrator 
হঠাৎ মেয়েটির কান্না বন্ধ হয়ে যায়। আর তন্ময় কিছু ভেবে ওঠতে পারিনি সে কি করবে। ঠিক তখনই মেয়েটি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যায়, তারপর তন্ময়ের দিকে তাকায়, ভয়ঙ্কর মুখ, লাল লাল চোখ। তারপর সে মেয়েটি নিজের মাথাটা চারিদকে ঘুরিয়ে দেয়। তন্ময় কিছু করা বা বলার আগেই সেই মেয়ে তার সামনে এসে দাড়িয়ে যায় আর বলে

জয়া
চলে যা.. চলে যা এখান থেকে.. নাহলে তোরা দুজনই মরবি, দুজনই মরবি

তন্ময়
(চিৎকার)
ভূত… ভূত…

(অনুপম জেগে যায় এবং দেখে)

অনুপম
ভু ভু ভূত.. তন্ময় পালা

Narrator 
এর পর দুজনেই কোনভাবে ওই ঘর থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে করতে পালিয়ে যায়।

তন্ময়
ভূত…, পালা অনুপম পালা

অনুপম
ভূত… কেও আছো বাঁচাও.. কেও আছে

Narrator 
অন্যদিকে, সেই মেয়েটির ভূত সেই বাড়ির ভাঙ্গা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তাদের পালিয়ে যেতে দেখে …তন্ময় আর অনুপম পাগলের মতো সেই জঙ্গলে অন্ধকারে ছুটতে থাকে। আর বার বার পেছনে তাকিয়ে দেখে। কিছু ক্ষণ পর অনুপম দাঁড়িয়ে যায় আর বলে

Scene -3


অনুপম
(হাঁপিয়ে)
দাঁড়া তনময় দাঁড়া, আমি আর পারছি না। আমি আর ছুটতে পারছি না।

তন্ময়
অনুপম আমাদের পালাতেই হবে নাহলে ও আমদের শেষ করে ফেলবে

অনুপম
আমার মনে হয় না ও আমাদের পেছনে আসছে। কই পেছনে তো তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না

তন্ময়
আরে দেখতে পাচ্ছি না তো কি হয়েছে, ওর অপেক্ষায় কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি

অনুপম
না,. দাঁড়িয়ে থাকা চলবে না

(তখনি কারো আওয়াজ আসে)

সাধক
কে, কে এই জঙ্গলে এত রাতে আমার তপস্যায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে? কে

দুজনই
কে কে কথা বলে, আ আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন

Narrator 
সেই অন্ধকারের মধ্য থেকে এক সাধক তাদের সামনে আসে। সাংসারিক মোহ মায়া থেকে দূরে এই জঙ্গলে তিনি তপস্যা করছিলেন, তিনি হচ্ছেন মা কালীর ভক্ত, 

তন্ময়
বাবা, আমাদের বাঁচান, আমারা দুজনই বড় বিপদে পড়েছি

অনুপম
হ্যাঁ বাবা, আপনি আমাদের বাঁচান, আমাদের বাঁচান

সাধক
শান্ত হও, তোমাদের কিছু হবে না।আগে বল তোমার এত রাতে এই গভীর জঙ্গলে কি করছ আর কে তোমাদের মারতে চায়ছে

Narrator 
এরপর দুজনেই সবকিছু ওই সাধক কে খুলে বলে, কেন দুজনে জঙ্গলে এসেছিল, কীভাবে জঙ্গলে আটকে গেল আর কি দেখে তারা ভয় পেয়েছিল

সাধক
জয়া

অনুপম
জয়া..? আমারা কিছু বুঝলাম না বাবা

তন্ময়
হ্যাঁ বাবা, কে জয়া, আমরা তো আপনাকে ওই মেয়ে ভূতের কথা বললাম আর আপনি জয়া বলছেন

সাধক
ওই ভূত আর কেউ নয় ওর নাম হচ্ছে জয়া.. অনেক সুন্দর, মিষ্টি মেয়ে যার নাম ছিল জয়া। এ অনেক পুরনো গল্প। আজ থেকে প্রায় 70 বছর আগে তখন  আমার বয়স সবে 10 বছর হবে। তখন আমি এই জঙ্গল থেকে দূরে আমতলা গ্রামে থাকতাম। তখন বাবার মুখের শুনেছিলাম ওই জয়ার গল্প। বড় অভাগি মেয়ে

অনুপম
বাবা কি শুনেছিলেন

সাধক
বাবা বলছিলেন তার বয়স তখন খুব বেশি ছিল না, ওই হবে প্রায় ২০ বছর। তখন ব্রিটিশ ও কিছু বড় জমিদারের শাসন ছিল। জয়া এই আমতলার গ্রামের মেয়ে ছিল, শুনেছি সে দেখতে খুব সুন্দর ছিল।তখনকার দিনে কোনো জমিদার বা ধনী ব্যক্তি কোনো মেয়েকে পছন্দ হলেই তাকে হয় ইচ্ছায় বা জোরপূর্বক বিয়ে করতেন। আবার কাও কে টাকার জোরে বিয়ে করত।

এক জমিদার জয়াকে পছন্দ করেছিল। তিনি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জয়া বিয়ে করতে চাইনি কারণ জমিদার তার থেকে বয়সে অনেক বড় চুল। ওই জমিদারির নাকি জয়ার মতো নাতনি ছিল। কিন্তু জয়ার বাবা মায়ের এই বিয়েতে কোন আপত্তি ছিল না কারণ ওই জমিদার জয়ার মা বাবাকে অনেক টাকার লোভ দিয়ে ছিল

Flashback 

Scene -4

জয়া বাড়ি

জয়া
না আমি বিয়ে করব না। 

মা
করবি না মানে, জমিদার আমদের টাকা দিয়েছে,.. কি গো তুমি কিছু বলবে না

বাবা
বলবই তো, শুন জয়া আগামী দু দিনের মধ্যে তোর বিয়ে হচ্ছে, বেশ এটাই শেষ কথা

Dissolve to
Present 


অনুপম 
একি কোন কথা হল, শুধু মাত্র টাকার জন্য মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে

সাধক
হাহা হাহা, ওরে আমাদের দেশে অনেক কুপ্রথা ছিল সতীদাহ প্রথা, বাল্য বিবাহ আবার অনেক জায়গাই নিজের মেয়েকে বিয়ের নামে বিক্রি করে টাকা কামানো..

তন্ময়
তারপর কি হলো

সাধক
তারপর…

Flashback 

((জয়া জমিদারের সাথে বিয়ে হচ্ছে,.. জয়ার চোখে জল)
Cut to
Scene-5

রাত, জঙ্গল

(জয়া কে পালকি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর জমিদার ঘোড়ায় যাচ্ছে)

কাহার 
হেয় হো, হেয় হো,হেয় হো, হেয় হো

জমিদার
ওরে জোরে জোরে পা চালা, জোরে জোরে

এক কাহার
বাবু বলছিলাম এখনো অনেকটা পথ বাকি, এই জঙ্গল পার হতে এখন ও অনেক সময় লাগবে। আমাদের একটু জিরিয়ে নিলে ভালো হতো না।

জমিদার
আচ্ছা ঠিক আছে। একটু এগিয়ে এই পথেই একটা বাড়ি আছে। ওখানে থামবি। আমি ও একটু জিরিয়ে নেব।

কাহার
কি বলছেন বাবু এই গভীর জঙ্গলে ও আপনার বাড়ি আছে। 

জমিদার
আরে হ্যাঁ হ্যাঁ ওটা বাড়ি বলা ঠিক হবে না। বলতে হলে ওটা আমার নিরুপায় ঠিকানা। এখন বয়স হয়ে গেছে কিন্তু আমি যখন তোদের বয়েসে ছিলাম তখন আমি এই জঙ্গলে শিকার করতে আসতাম আর রাত হলে ওখানে থাকতাম। কত বাঘ ভালুক মেরেছি ওসব কথা তোরা বুঝবি না। নে চল চল তাড়াতাড়ি চল 

সাধক(vo)
জমিদার ও কাহারের দল ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। আর গিয়ে পৌঁছাই ওই ঘরটার কাছে। কাহারের দল পালকি নামিয়ে আরাম করে আর জমিদার তার চাবির গুচ্ছ থেকে ওই ঘরটার চাবি বের করে, ঘরের দরজাটা খুলে, তারপর পালকির দিকে এগিয়ে গিয়ে জয়া কে ডাক দেয়.. কিন্তু কোন সারা পায় না, তখন পালকির ভেতরে দেখে, জয়া নেই

জমিদার
আরে এই মেয়েটা গেল কোথায়?... জয়া জয়া…

জমিদার
(কাহার কে)
এই এই তোরা বসে কেন আছিস.. পালকিতে কেই নেই

কাহার
এ কি করে সম্ভব বাবু.. বৌমুনি পালকতেই ছিল

জমিদার
তবে আমি কি মিথ্যা বলছি হারামজাদার.. যা যেখান থেকে পারিস ওকে খুঁজে নিয়ে আয়,..

সাধক(vo)
এরপর কাহারের দল জয়াকে খুঁজতে চলে যায় আর কিছুক্ষণের মধ্যে জয়াকে খুঁজে নিয়ে আসে। 

জয়া
ছেড়ে দাও, আমায় ছেড়ে দাও

bangla cartoon
জয়া 



কাহার
বাবু, বাবু বৌমুনিকে পেয়ে গেছি বাবু

(জমিদার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে)

জমিদার
Waah, এই তো কাজের কাজ করেছিস

(জয়ার চুলের মুঠি ধরে বলে)
কি ভেবেছিলি, আমার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার এত সহজ

জয়া
আমাকে যেতে দিন, আমি এই বিয়ে মানি না

জমিদার
যেতে দেবো? জানিস তোর জন্য কত টাকা খরচ করতে হয়েছে। ভেবেছিলাম যখন আমার মন ভরে যাবে তখন তোকে বাড়ির এক কোনায় রেখে দেব, কিন্তু এখন সেটা আর করা চলবে না, যদি তুই পালিয়ে যাস তাহলে যে আমার টাকাগুলো জলে যাবে। আর আমার সুনামটা খারাপ হবে। তবে তোকে শাস্তি পেতেই হবে হাহা হাহা

(জমিদার জয়াকে টেনে ওই ঘরে মধ্য নিয়ে যায় আর জয়ার চিল্লানো আওয়াজ আসে)

জয়া
আমাকে ছেড়ে দাও.. ছেড়ে দাও

(কিছুক্ষন পর)

জমিদার
(কাহার কে)
ওই মেয়েকে আমার আর লাগবে না তোদের ইচ্ছে থাকলে তোরাও 

সাধক
এরপর একের পর এক কাহার ওই ঘরের মধ্যে যায় আর জয়ার সাথে দুষ্কর্ম করতে থাকে..

কাহার
বাবু বাবু

জমিদার
কি হয়েছে

কাহার
ওই মেয়ে যে চোখ খুলছে না বাবু, মনে হয় মারা গেছে

(জমিদার কিছু টাকা বের করে)

জমিদার
এই গুলো তোরা রাখ.. এই ঘরটা আগুন লাগিয়ে দে আর হ্যাঁ, কেও যেন কিছু জানতে না পায়, বুঝলি যা যা তাড়াতাড়ি কর

কাহার
ঠিক আছে বাবু

সাধক
এরপর তারা ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। শোনা যায় জয়া যখন আগুনে পুড়ছিল তখনও সে বেঁচে ছিল। কয়েকদিন পর কাহার দলের একজন মারা যায়। তারপর আরেকজন। জয়ার আত্মা প্রতিশোধ নিতে এসে ছিল তাই একের পর এক সব কাহার কে মেরে ফেলে, তারপর জমিদার

Scene -6
জমিদার বাড়ি

জমিদার
আ আ আমাকে ক্ষমা করে দাও.. আমাকে মের না

জয়া
হাহা হাহা ক্ষমা তোর যে কোন ক্ষমা নেই, আমি তোর বংশ নাশ করে দেব

সাধক(vo)
জমিদার ও মারা যায়।কিন্তু জয়ার এখানে থামেনি কারণ তার এই অবস্থার জন্য তার বাবা-মা সহ পুরো গ্রাম দায়ী ছিল।কারণ তার গ্রামে মেয়েদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না, তাদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বা বোঝা মনে করা হতো। তাই জয়া তারা বাবা মা কেও মেরে ফেলে আর ধীরে ধীরে গ্রামের একের পর এক সবাই কে মারতে থাকে। তারপর গ্রামবাসীরা একজন তান্ত্রিককে নিয়ে আসে।  

Cut to

Present 

অনুপম 
তান্ত্রিক?

সাধক
হ্যাঁ তান্ত্রিক। ওই তান্ত্রিক, তার জাদু শক্তির মাধ্যমে, জয়ার মারা যাওয়ার জায়গা খুঁজে বের করে, মানে সেই ঘর যেখানে তোমারা ছিলে। 
তারপর ঘরের দেওয়ালে পেরেক গেড়ে, মন্ত্র পাঠ করে জয়ার আত্মাকে বন্দী করে দেয়। 

তন্ময়
পেরেক? হ্যাঁ ঠিকই তো। আমাদের ব্যাগটা আমি একটা পেরেকে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম, যখন নিচে পড়ে যায় তখন বোধ হয় ওই পেরেকটা ও নিচে পড়ে গেছে 

সাধক
হ্যাঁ তাই হয়তো জয়ার আত্মা আবার ঘুরে এসেছে

অনুপম
কিন্তু বাবা, এখন কি করা উচিৎ ওকে না থামালে সবাইকে মেরে ফেলবে।

সাধক
শুধু তোমরা ছাড়া এই গ্রামের কেও বাঁচবে না  আমদের এখুনি কিছু করতে হবে তোমরা আমার সাথে এসো

Narrator 
সে সাধক তন্ময় ও অনুপম কে আবার সেই পোড়া বাড়িতে নিয়ে যায়। তারপর সাধক তার পোটলি থেকে কিছু কাপড় বের করে তা থেকে একটি পুতুল বানায় 

Scene-7
বাড়ি

সাধক
আমি জয়ার শেষকৃত্য কাজ শুরু করছি, ততক্ষণ তোমারা কেও নিজের জায়গা ছেড়ে উঠবে না

Narrator 
সাধক জয়ার শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি ক্রমাগত মন্ত্র উচ্চারণ করেন এবং মাঝে মাঝে পুতুলের উপর জল ছিটিয়ে দেন।তখন জয়ার আত্মা চিৎকার করে তাদের সামনে আসে। তন্ময় এবং অনুপম অনেক ঘাবড়ে যায় কিন্তু তারা নিজের জায়গা ছেড়ে ওঠে না। সাধক ক্রমাগত মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকে এবং বিধি শেষ হয়ে গেল ওই পুতুলটি কে পুড়িয়ে দেয় আর জয়ার আত্মা মুক্তি পেয়ে যায়

জয়া
আজ বহুবছর পর আমি মুক্তি পেয়েছি তার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 

সাধক
দেবী,. তোমার মুক্তির কাজে আমি কাজে লেগেছে এর জন্য আমি প্রভুর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। এবার তুমি এই জগত ছেড়ে প্রভুর স্বর্ণে যাও। আশা করি পরের জন্মে তোমর সব স্বপ্ন, সব সাদ পূরণ হবে।

( জয়ার আত্মা মিলিয়ে যায় )


👉গল্পের অ্যানিমেশন - 





No comments

Powered by Blogger.