পেঁপের উপকারিতা ও ঔষধি গুণ
পেঁপে |
আমরা সবাই জানি আমরা প্রতিদিন যেসব সকসব্জী খায় তার মধ্যে অনেক এমন গুণ আছে যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাক-সব্জীর ভূমিকা অসীম। সুলভ ও সস্তা শাক সব্জী শরীর কে সুস্থ রাখে সেই সঙ্গে যদি কোনো কারণে শারীরিক অসুবিধা বা অসুস্থতা দেখা দেয় , তাহলে নির্দেশ অনুসারে এগুলোর প্রয়োগেও রোগ সারে। তবে আমার অনেকে জানি না কোন সব্জীর কোন গুণ আছে । তাই আমার বিভিন্ন আয়ুরবেদিক বই, নিউজ প্রতিবেদন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এখানে দিলাম । ...
পেঁপের উপকারিতা
পেঁপে বেশ সুস্বাদু একটি ফল। পাকলে এটি বেশ রসালো ও মিষ্টি হয়। এই পেঁপে কাঁচা থাকতেও খাওয়া যায়। সালাদ করে, তেঁতুল-মরিচ দিয়ে মাখিয়ে কিংবা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয় কাঁচা পেঁপে। কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। বিভিন্ন রকম অসুখ সারাতে কাঁচা পেঁপে খুবই উপকারি। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেঁপেতে ক্যারোটিন অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকায় যারা মেদ সমস্যায় ভুগছেন তারা অনায়াসে খেতে পারেন এ ফলটি। জেনে নিন কাঁচা পেঁপের কিছু উপকারিতা-
পেঁপেতে আছে এন্টি-অ্যামোবিক ও এন্টি-প্যারাসিটিক বৈশিষ্ট্য যা অন্ত্রের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি এটি বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিড রিফ্লাক্স, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, অন্ত্রের সমস্যা, পেটের আলসার ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকেও রক্ষা করে। পেঁপের পুষ্টিগুণ ব্রণ ও ত্বকের যেকোনো ধরনের সংক্রামক থেকে রক্ষা করে। এমনকি এটি ত্বকের ছিদ্র মুখগুলো খুলে দেয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা পেঁপে ত্বকের মরা কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে সাহায্য করে।এটি ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখার পাশাপাশি রক্তের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর সোডিয়ামের পরিমাণকেও কমিয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি।পেঁপে ভিটামিন এ-তে ভরপুর। যা দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখে। যারা ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তিতে ভুগছে, তারা নিয়মিত পেঁপে খেলে উপকার পাবেন। পেঁপের মধ্যে থাকে ভিটামিন সি। যা স্কার্ভি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম যা দাঁত ও হাড়ের জন্য খুবই উপকারি। যাদের আঁচিল রয়েছে তারা আঁচিলের উপর পেঁপের কষ লাগাতে পারেন। এভাবে দীর্ঘদিন লাগালে আঁচিল সেরে যাবে। কাঁচা পেঁপে বা পাকা পেঁপে দুটিই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আর পেঁপে খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায়।
পেঁপের পুষ্টিগুণ মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারী। কারণ এটি মহিলাদের যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। পেঁপের পাতা, তেঁতুল ও লবণ একসাথে মিশিয়ে জল দিয়ে খেলে ব্যথা একেবারে ভালো হয়ে যায়।ঋতুস্রাবের সমস্যা থেকেও পেঁপে আপনাকে রক্ষা করবে। যারা বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তারা নিয়মিত পেঁপে খেতে পারলে তাদের বুকের দুধের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।
সব থেকে ভালো হয় যদি কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপে সেদ্ধ করে, ডালের মধ্যে দিয়ে, তরকারী করেও খেতে পারেন। যকৃতের ক্ষেত্রে পেঁপে ভীষণ উপকারি। আপনি যদি নিয়মিত পেঁপের রস তবে তা আপনার লিভারকেও ভালো রাখবে।শুধু পেঁপের রসই নয়, পেঁপের আঠাও খুব ভালো কাজ করে শরীর সুস্থ রাখার জন্য।
কাঁচা পেঁপে কিভাবে খাবেন? কাঁচা পেঁপে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এর মধ্যে গোল মরিচের গুঁড়ো ও লেবু মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এটি খেতে পারেন। এভাবে কাঁচা পেঁপে খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হবে। এমন কি জ্বর হলেও কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। আর এটি জ্বর ভালো করতেও সাহায্য করবে। এছাড়াও পেঁপে খেলে দাদ, চুলকানি যেকোনো ধরণের চর্মরোগ, ফুসকুড়ি, ব্রণ ইত্যাদি কমে যাবে। নিয়মিত পেঁপে খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
রোগ আরোগ্যে কাঁচা পেঁপের ব্যবহার
১। প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এবং রাত্তিরে রুটি খাওয়ার পর এক টুকরাে কাঁচা পেঁপে ভাল করে চিবিয়ে খেয়ে এক গ্লাস জল খেলে সকালে পেট পরিষ্কার হয়— অম্বল ও বদহজমের কষ্ট দূর হয়।
২। ১০ ফোটা করে কাঁচা পেঁপের দুধ বা আঠা প্রতিদিন অল্প জলে মিশিয়ে ১৫ দিন। খেলে দাদ ও চর্মরােগ সারে, কৃমি নাশ হয়।
৩। ২০/২৫ ফোটা কাচা পেঁপের আঠা অল্প চিনির সঙ্গে মিশিয়ে ১ মাস নিয়ম করে খেলে পিলে রোগ সারে ও পেটের টিউমার এবং বায়ু রোগে খুব উপকার পাওয়া যায়।
৪। দুই চা চামচ কাচা পেঁপের আঠা ২ চা চামচ চিনি মিশিয়ে ৪-৫ সপ্তাহ ধরে দিনে তিনবার করে খেলে পিলের আয়তন ক্রমশ কমে যায়।
৫। দুই চা চামচ পেঁপের আঠায় ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে দুধের সঙ্গে ২০-২২ দিন। খেলে অম্বল ও অজীর্ণ রোগে উপকার হয়।
৬। যে সব মায়েদের সদ্য বাচ্চা হয়েছে তারা কাঁচা পেঁপের তরকারি নিয়মিত খেলে। তাদের স্তনের দুধ বাড়বে।
৭। কাঁচা পেঁপে বা পেঁপের গাছের আঠা ১-২ মাস খাওয়া পুরােনাে অজীর্ণ বো৷ পেটের অসুখে,পুরনো পেটের অসুখ,কোষ্টবদ্ধতা প্রভৃতি রোগের পক্ষে উপকারী
৮। পিলে ও লিভার বেড়ে যাওয়া, তার সঙ্গে জ্বর ও দুর্বলতার ওষুধ হিসেবে দিন ও রাত্তিরে খাওয়া-দাওয়ার পর নিয়মিত ৩-৪ সপ্তাহ ৫/১০ ফোটা করে পেঁপের আঠা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৯। ওষুধ হিসেবে কাচা পেঁপের গুণ পাকা পেঁপের চেয়ে বেশি। পেপটিন বা পেঁপের আঠার গুণ অশেষ।
১০। গর্ভবতী মহিলাদের এবং যাদের মাসিক বেশি হয় তাদের পেঁপে খাওয়া উচিত নয়—কারণ পেঁপে রজঃ (রক্ত) ও ভ্রূণ নিঃসারক।
১১। বড় কাচা পেঁপে চিরে নিয়ে তার নীচে একটি কাপ বা ডিশ রাখুন। এইভাবে দুধ বের করে নিন। এই দুধ বা আঠা তৎক্ষণাৎ রােদুরে শুকিয়ে নিন। এই আঠা গুঁড়াে করে শিশিতে ঢাকনা বন্ধ করে রাখুন। গ্যাস্ট্রিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের অসুখে এই ১-সপ্তাহ প্রয়োগে আশ্চর্য ভাল ফল দেয়। পাকস্থলীর দাহ, বায়ু গােলক,ব্রণ, অম্লপিত্ত, বদহজম প্রভৃতি অসুখ এই চূর্ণ নিয়মিত খেলে সেরে যায়।
১২। আধ চামচ পেঁপের দুধে চিনি মিশিয়ে ২ সপ্তাহ খেলে অজীর্ণতা সারে।
১৩। কাঁচা পেঁপের বীজ কৃমিনাশক।
১৪। এই বীজ মেয়েদের ঋতু নিয়মিত করে এবং বেশি খেলে গর্ভপাত হয়।
১৫। পেঁপের পাতা ১ মাস খেলে হার্ট সবল হয় এবং ৩-৪ দিন খেলে জ্বরনাশ হয়।
১৬। পেঁপের পাতা জলে সেদ্ধ করে ৩-৪ সপ্তাহ চায়ের মতাে তৈরী করে খাওয়ালে | হৃদরোগের ভাল ফল দেয়।
No comments